Sunday, February 13, 2011

১৪ই ফেব্রুয়ারী বলতে যা জানি...

১৪ই ফেব্রুয়ারী...কতটাই বা জানি আমরা?বিশ্বায়নের জোয়ারে তরুন সমাজে এই দিনকে জেনেছে ভালবাসা দিবস হিসেবে।১৪ই ফেব্রুয়ারীতে দেখা যায় প্রেমের(!!) জোয়ার।মোবাইল কোম্পানিগুলো নতুন নতুন অফার দেয়,বিভিন্ন চ্যানেলে প্রদর্শিত হয় ভালবাসার নাটক।এই দিনটির যে আমাদের জীবনে বিশেষ একটি তাৎপর্য রয়েছে তা আমরা অনেকেই জানিনা।

১৯৮২ সালে তৎকালীন সেনাপ্রধান লে.জে.হু.মু এরশাদ ক্ষমতা দখল করে। সামরিক শাসন আরও একবার কায়েম করা হয়। এরশাদ আর সব ক্ষেত্রের সাথে শিক্ষা ব্যবস্থা নিজের মনের মতো সাজানোর কাজে নামে।শিক্ষা বিষয়ে তার অনুরাগ ছিল ব্যাপক।কাব্যপ্রতিভার কথা নাই বা বললাম।যাক,সে ঠিক করল শিক্ষানীতি ঢেলে সাজাবে। ধর্মের মতো সংবেদনশীল ইস্যুকে সে ব্যবহার করল হাতিয়ার হিসেবে। প্রথম শ্রেণী থেকে আরবি বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।এছাড়া উচ্চশিক্ষায় সবার অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হয় এর সাথে অর্থের আবশ্যকতা জুড়িয়ে দিয়ে।

তখন সরকারের সকল সমালোচনা করা ছিল শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এবং এ অপরাধ করার দুঃসাহস দেখায় ছাত্রসমাজ। প্রস্তাবিত শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে নেমে পড়ে ছাত্ররা। নভেম্বর থেকেই আন্দোলন জোরালো হতে থাকে। ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ সরকারকে প্রথমে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবি জানায়। এর উত্তরে শুরু হয় গ্রেপ্তার,নির্যাতন। পরিষদ ঘোষণা দেয় তারা তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে একুশে নতুন উদ্যমে পালন করবে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছাত্রদের বিপুল বিরোধিতার বহিঃপ্রকাশ দেখতে পায় এরশাদচলতে থাকে গ্রেপ্তারপর্ব।

১৯৮৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার ছাত্র সমবেত হয়েছিল কলাভবন ও পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে। তাদের সমুদ্র এগিয়ে চলে সচিবালয় অভিমুখে। মিছিল হাইকোর্ট পৌঁছাতেই পুলিশ হামলে পড়ে তাদের উপর। চালান হয় গুলি। প্রায় ১০-১২ জনের নিহত হবার খবর পাওয়া যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়, জারি করা হয় কারফিউ। কিন্তু এ ঘটনার পর আন্দোলন আরও তীব্র হয়। চট্টগ্রাম রাজশাহী সহ পুরোদেশে ছড়িয়ে যায় এ আগুন। অবশেষে ১৭ ফেব্রুয়ারী সরকার ঘোষণা দেয় জনমতের বিরুদ্ধে যেয়ে কোন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হবে না।

স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে এটিই ছিল সর্বপ্রথম স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন। কিন্তু গঙ্গার জল বহুদুর গড়িয়েছে। আজ দেখা যায় তৎকালীন স্বৈরবিরোধী আন্দোলনের প্রধান দুই নেত্রীকে সেই স্বৈরশাসককে নিজ নিজ জোটে টানার আকুল প্রচেষ্টা। সেই এরশাদ যেন আজ ক্ষমতা আরোহণের সিঁড়ি!!

গণমাধ্যমগুলোতেও এর ছাপ দেখা যায়। ১৪ই ফেব্রুয়ারীর এই ইতিহাস তাই কোথাও লেখা হয় না। নতুন প্রজন্ম আমাদের সাহসিক এই আন্দোলনের কথা হয়তো জানতেই পারবে না। ছাত্র আন্দোলনের গৌরবময় সময়গুলো একদিন রুপকথা মনে হবে তাদের। এখন ১৪ই ফেব্রুয়ারী মানে কোন অনুপ্রেরনাদায়ী দিবস নয়, অন্যের দেখিয়ে দেয়া ভালবাসা দিবস। টিভি-পত্রিকা সর্বত্র চলে ভালবাসার আহ্বান। ভালবাসাকে পণ্য বানিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে মুক্তবাজারে।

আধুনিকতা মানে নিজের অস্তিত্ব বিকিয়ে দেয়া নয়, বরং নিজের মূলকে জোরালো করে এগিয়ে যাওয়া। এ মর্ম আমাদের উপলব্ধি করতে হবে।

No comments:

Post a Comment